অভিজিত রায় ।। ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পদ স্বল্পতায় অপেক্ষমাণ তালিকার ১৯১৯ চিকিৎসক নিয়োগ পাচ্ছেন না। নিয়োগ বঞ্চিতরা বলছেন, ৪২তম বিসিএস থেকে চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার পরও ৬৭১৩ চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকবে। এসব পদে তাদের নিয়োগ দিলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় তারা স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেবেন। এ জন্য নিয়োগবঞ্চিতরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।
অপেক্ষমাণ একাধিক চিকিৎসক আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ২ হাজার চিকিৎসককে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর চলতি বছরের ৩০ জুন অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সভায় আরও ৪ হাজার চিকিৎসকের নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
এ হিসাবে মোট ৬ হাজার চিকিৎসক নেওয়ার কথা। কিন্তু পরবর্তীতে ৭ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নবনিয়োগ শাখার এক বিজ্ঞপ্তিতে ৪ হাজারের পরিবর্তে ২ হাজার অতিরিক্ত চিকিৎসক নেওয়ার কথা জানায়। ফলে চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ৪২তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল অনুযায়ী মোট ৫ হাজার ৯১৯ জন উত্তীর্ণ হলেও পিএসসি পদ স্বল্পতার কারণে ৪ হাজার জনকে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগের সুপারিশ করে। অবশিষ্ট ১ হাজার ৯১৯ জনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়।
এর আগে ৩৩তম বিসিএসে ২৪৫৪ জনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও ৬৩৪২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইভাবে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসেও ৪৫৪২ চিকিৎসকের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৬২০৩ জনকে নিয়োগ নেওয়া হয়। এ হিসাবে দুটি বিশেষ বিসিএস থেকেই অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নিয়োগ পান।
এদিকে ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অপেক্ষমাণ থাকা চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২১ স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা অধ্যায়ের সূচক অনুযায়ী, চিকিৎসক ও জনসংখ্যার অনুপাত হচ্ছে ১:১৭২৪। অর্থাৎ প্রতি ১ হাজার ৭২৪ জন মানুষের জন্য চিকিৎসক আছেন মাত্র ১ জন। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চিকিৎসক ও জনসংখ্যার অনুপাত ১:১০০০ থাকতে হয়। ১৬ নভেম্বর, ২০২০ইং তারিখে মহান জাতীয় সংসদে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও জানিয়েছেন, ‘সারা দেশে চিকিৎসকের ১১ হাজার ৩৬৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এমনকি ৬৪ জেলার সব সরকারি হাসপাতালেই কম-বেশি চিকিৎসক পদ ফাঁকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৩ হাজার ১৮৫টি পদ ফাঁকা রয়েছে।’
৪৩তম বিসিএসে সহকারী সার্জন কোনো পদ নেই। ফলে ৪০তম বিসিএস হতে ২৬০ জন এবং ৪১তম বিসিএস হতে আরও ১১০ জন চিকিৎসকের শূন্যপদ পূরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে ৪২তম বিসিএসের ৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ পাওয়ার পরেও বর্তমানে দেশের সরকারি চিকিৎসা সেবাদান কেন্দ্রগুলোতে ৬ হাজার ৭১৩টি চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকবে।
৪২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা চিকিৎসক ডাঃ মেহেদী হাসান শুভ বলেন, “বর্তমানে দেশে কোভিড মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার খুবই প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৯ এর পূর্বে দেশের স্বাস্থ্যব্যাবস্থার অবস্থা খুবই নিম্মমানের ছিলো। বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যন্ত পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরনের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক সহ আরো নানান উদ্যেগ গ্রহন করেছে। করোনার জন্য আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ সমস্যা উত্তরনে প্রচুর জনবল দরকার। আমরা ইতিমধ্যে অনেক ডাক্তারকে হারিয়ে ফেলেছি। কাজেই ১৯১৯ জন ডাক্তার নিয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যার অনেকাংশে লাঘব হবে। চিকিৎসকদের জন্য আগের প্রতিটি বিশেষ বিসিএসে ৬,০০০ এর অধিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৩৯তম বিসিএস (বিশেষ) এ সহকারী সার্জন হয়েছেন ৬,২০৩ জন আর ৩৩তম বিসিএস এ সহকারী সার্জন হয়েছেন ৬,৩৪২ জন। তাহলে এই মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ৬,০০০ এর অধিক ডাক্তার নিয়োগ কেন নয?
Leave a Reply